আমাশয় এর বিশদ বিবরণ: কেন হয় কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

 



আমাশয় মূলত আন্ত্রিক প্রদাহ যাতে ব্যথাসহ পাতলা পায়খানা ও রক্ত যেতে পারে। বার বার অল্প বা বেশী সিউকাসযুক্ত এবং মাঝে মাঝে রক্তযুক্ত মলত্যাগ করার নাম আমাশয় বা ডিসেন্ট্রি। ইহা বৃহদান্ত্রের সদ্য প্রদাহ জনিত অবস্থা।


আমাশয়ের করণ:

 এমিবিক ডিসেন্ট্রী বা সাদা আমাশয়: এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা দ্বারা আন্ত্রিক ক্ষতসহ প্রদাহকে সাধারণত এমিবিক ডিসেন্ট্রী বলে। এই প্যারাসাইটটি সাধারণত খাদ্যদ্রব্য ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।



ব্যাসিলারী ডিসেন্ট্রী বা রক্ত আমাশয়: 

রক্ত আমাশয়কে সিগেলোসিস বলা হয়। পৌষ্টিক নালী যখন সিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন তাকে সিগেলোসিস বা রক্ত আমাশয় বলে। এটা সাধারণত মাছি, মল/পায়খানা এবং খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশই হচ্ছে এ রোগের অন্যতম কারণ।


আমাশয়ের  প্রকারভেদ :

৪ প্রকার ডিসেন্ট্রি হয়ে থাকে। যথা:

১.এমিবিক ডিসেন্ট্রী

২. ব্যাসিলারী ডিসেন্ট্রি

৩. জিয়ারডিয়াল ডিসেন্ট্রি

৪. রাউন্ড ওয়ার্ম ডিসেন্ট্রি


তবে প্রধানত দুই প্রকার আমাশয় সচরাচর দেখা যায়। যথা:-

সাদা আমাশয় বা এমিবিক ডিসেন্ট্রি এবং রক্ত আমাশয় বা বেসিলারী ডিসেন্ট্রি।


  একিউট ব্যাসিলারী ডিসেন্ট্রী এবং একিউট এমিবিক ডিসেন্ট্রির পার্থক্য লক্ষণসমূহ:



###  একিউট ব্যাসিলারী ডিসেন্ট্রির লক্ষণসমূহ  ####

১. ইহা সকল বয়সে হতে পারে, তবে শিশুদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

২. ২৪ ঘন্টায় বহুবার (১০ বারের অধিক) মলত্যাগ হয়, পরিমানে সামান্য।

৩. সমস্ত পেটে অত্যধিক ব্যথা হয়।

৪. পেটের ব্যথা মল ত্যাগের আগে বাড়লেও প্রায় সর্বক্ষণ থাকে।

৫. জ্বর ৯৯০ ফা. হতে ১০১০ ফা. বা ততোধিক হতে পারে।

৬. মল যখন তরল হয় তখন উহা মাংস ধোয়া পানির রং ধারণ করে।

৭. মধ্যম রকমের মলে রক্তের পরিমাণ বেশি থাকে, রং উজ্জ্বল লাল

৮. দুর্গন্ধ কম হয়।

৯. বেড প্যানের তলদেশে আঠার মত লেগে থাকে।



####   একিউট এমিবিক ডিসেন্ট্রির লক্ষণসমূহ ####

১. ইহা সকল বয়সে হতে পারে, তবে শিশুদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত  কম হয়।

২. ২৪ ঘন্টায় অল্প কয়েকবার (৬-৮ বার) মলত্যাগ হয়, পরিমানে প্রচুর ।

৩. তলপেটে অল্প ব্যথা থাকে বা থাকে না।

৪. পেটের ব্যথা শুধুমাত্র মলত্যাগের আগে অনুভূত হয়।

৫. জ্বর হয় না ।

৬. রঙের পরিবর্তন হয় না ।

৭. মধ্যম রকমের মলে রক্ত সামান্য  থাকতে পারে, রং গাঢ়  লাল

৮. দুর্গন্ধ বেশি হয়।

৯. বেড প্যানের তলদেশে আঠার মত লেগে থাকে না।




আমাশয়ের লক্ষণ:

*তল পেটে মোচড়ানো 

*পাতলা পায়খানার সঙ্গে সঙ্গে মিউকাস অথবা রক্ত আসা

*জ্বর জ্বর ভাব

*জিহ্বা বিস্বাদ হয়ে যাওয়া

*নিদ্রাহীনতা, মাথা ব্যথা 

*রোগ পুরাতন হয়ে গেলে জ্বর ওঠা 

*বারবার তৃঞ্চা পায়

*জিহ্বা লাল হয়ে ওঠা 

*মূত্রকৃচ্ছতা  দেখা দেয়া 

*নাড়ির গতি ধীর হয়ে যাওয়া 

* জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়া 

*চোখ- মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া

*বমি বমি ভাব বা দুর্বলতা দেখা দেয়া

*পানি স্বল্পতা ইত্যাদি


আমাশয় নিরাময়ে  একক ভেষজ:

কুড়চি : ১০ - ২০ গ্রাম ছাল ৩-৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে সেব্য্

থানকুনি : দৈহিক  ২-৩ গ্রাম থানকুনি চিনিসহ ২-৩ বার সেব্য।

বেলগুঁঠ বা কচিবেল : ৬  ঘন্টা পরপর ২-৫ গ্রাম কাঁচা বেল শ্বাস ঠান্ডা পানিসহ সেব্য।

কাঁচাকলা : পরিমাণমত কাঁচাকলা তরকারী বা ভর্তা বানিয়ে খেতে হয়।



আমাশয় নিরাময়ে কার্যকর মডার্ণ হারবালের খাদ্য ও পথ্যসমূহ:

ডিসেন্ট কেয়ার : ২ চামচ  করে   দিনে ৩ বার খাবার পর সেব্য

পেচ : ১ টি করে ক্যাপসুল দিনে ৩ বার খাবার পর সেব্য

কুটজারিস্ট : ১ টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ বার সেব্য 

শরবত বেলগিরী : ২ চা - চামচ ৩-৪ বার আহারের পর সেব্য

কেরিকা পাপাইয়া : ১-২ টি ট্যাবলেট দিনে ৩-৪ বার সেব্য


আমাশয় প্রতিরোধের উপায়: 

পরিষ্কার - পরিচ্ছতা মেনে না চললে আমাশয় ছড়াতে পারে।

তাই আমাশয় প্রতিরোধ করতে হলে নিচে উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে:


*মলত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিনে হাত ধুয়ে নিন। এছাড়াও বাহির হতে ঘরে এসে বা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

*খাবার খাওয়ার আগে, রান্না করার আগে, বাচ্চার যত্ন নেয়ার আগে এবং বাচ্চাকে দুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন।

*তোয়ালে বা মুখ মোছার রুমাল কখনোই  অন্যেই সাথে শেয়ার করা উচিত নয়।

*ফিটকিরির পানির পানি দ্বারা বাথরুম, রুমের মেঝে, রান্নাঘর ও পানির ট্যাংক পরিষ্কার করুন।

*ভ্রমনকালে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করবেন ও ফলমূল বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে খাবেন।


স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ:

*কম ঝাল ও তেল দিয়ে তৈরি খেতে হবে।

*যেকোন জটিলতায় চিকিতসকের পরামর্শ নিতে নিবে।

*যেকোন কিছু খাওয়ার পূর্বে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন